স্বপ্ন
খুব ভাবতে ইচ্ছে করে;
তুমি এখনো সেই রাই কিশোরী,
সুর তুলে নূপুরে,
চঞ্চলা নীলাম্বরী;
অলস দুপুরে,
পুকুরের ধারে ,
কখনো বা একমুঠো
জোৎস্না চুরি করে
চিলেকোঠার ঘরে,
একরাশ স্বপ্ন সাজিয়ে,
এলোকেশী, অনেক যতনে,
আমাকে রাঙিয়ে রাখো।
ভীষণ জানতে ইচ্ছে করে ,
এখনো কি তুমি পীতাম্বরি,
বিশেষ করে, যেদিন
বাগ্দেবীর অঞ্জলি।
হালকা হাতে
বাঁধা কবরীতে,
ভালোবেসে আলগোছে
সুগন্ধি ফুল রাখো।
গোপন কথাটি গুছিয়ে গভীরে,
আমি আড়াল থেকে অপলক
আমার চোখের তারায়
নিজেকে বারেবার দেখো ।
ভীষণ শুনতে ইচ্ছে করে
সেই সুমধুর স্বর,
মৃদু কলরব,
যেন বসন্তের কোকিল;
গ্রীষ্ম সোনাঝরা
শ্রাবনী ঝর্ণা অথবা
শরৎ কাটছে আড়মোড়া;
ঘাসে হেমন্তের শিশির
কিম্বা শীত ভীষণ নিবিড়;
আধোঘুমে ভোর,
আদুরে বিকেল মন্থর;
রাত্রি মোহময়,
সকাল অগোছালো হয়,
আমাকে জাগিয়ে রাখো।
ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করে,
তুমি কি এখনো প্রজাপতি হও
সেদিনের মতো?
একরাশ রং মেখে,
পিচকারি হাতে
পথের বাঁকে বাঁকে
লুকিয়ে থাকো
শুধু ভেজাবে বলে আমাকে,
যেখানে মুখোমুখি পাশাপাশি,
শিমুল পলাশে,
করে হাসাহাসি,
গোপনে ভালোবেসে;
রামধনু প্রজাপতি হয়ে
পাপড়ি মেলো ধীরে,
মহুয়ার নেশায় আমায়
মাতাল করে রাখো।
তুমিও কি এমনি করেই ভাবো,
কাজের ফাঁকে, সময়ের বাঁকে?
আমার ইচ্ছেগুলো এখনো কি
ডানা মেলে তোমার ভাবনার
আলোছায়ায়?
ভালো থেকো ভালো বাসা,
ভালো বেসে ভালো বাসায়।
নববর্ষ
পুরানো জমা খরচের হিসাব
জড়ো করে রাখা সব;
সুখ, দুঃখ, বসন্ত বিলাপ
প্রেম, পরিণয়, প্রতিশ্রুতি, প্রলাপ।
আবেগে, অনুভবে, অনুরাগে
কুড়িয়ে আশাগুলি নিবিড় নীরবে,
বুকভরা নিঃশ্বাসে,গভীর বিশ্বাসে
আরো একবার, আবারো ভালোবেসে
বাঁধবে খেলাঘর; অতৃপ্ত অভিসার
খুঁজে ফেরে নীড়, অনুরাগের অধিকার।
রাতজাগা জোছনা, চাঁদনী মূর্ছনা
সাক্ষী থাকুক সব, পালাবদলের কলরব,
আনন্দ আজ আশ্চর্য অশ্রুসিক্ত
বোধনে বিসর্জনের মন্ত্রের মতো;
অস্তরাগের বিষাদ ভৈরবীর কোমল ঋষভে
স্বপ্ন আঁকে সাহসের বৈভবে।
ছেড়ে যাবার যাতনা যত,
ছুঁয়ে থাকার লোভ সংযত;
দিয়ে যাবে নতুনেরে আত্মবিশ্বাস অজেয়,
আত্মশুদ্ধির বীজ, অসমাপ্ত বিজয় ।
কথারা আজ প্রহরে প্রহরে জেগে থাক।
বিদায়ের বিলাপ যাক ডুবে যাক ।
দুহাতে বাড়িয়ে ডেকে নাও তারে,
ধীর পায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যে দ্বারে।
আবিরে, আলিঙ্গনে, জয়োল্লাসে
আবার বাজবে সুর নতুন স্বপ্ন বিলাসে।
স্পর্শ
তোমার অনুরাগের আঙুলগুলি মনের মীড় ছুঁলো
গভীর হলো গোপন যত গ্লানি, এই বুঝি বৃষ্টি শুরু হোল।
অকথিত
মাঝে মাঝে মনে ঝিরি ঝিরি শুরু হয়,
চোখের তীরে বাদল ভিড়েছে যত;
শ্রাবণী নূপুরে ওরা কথা কয়,
মেঘের পরে মেঘ জমছে অবিরত।
অনুকবিতা
বৃষ্টি তুমি অঝোর হয়ে কেঁদে না,
মন খারাপের মেঘেরা ভীড় করে;
পালক সরিয়ে চলো একসাথে নীল খুঁজি,
রোদেলা হাসি উপচে যেথা পড়ে ।
আমন্ত্রণ
তোমার ঘর বুঝি বড় প্রাসাদ,
দামি খেলনা, রংবাহার, আসবাব?
একটা কথা সত্যি বল তো,
মনটাও কি তোমার প্রাসাদের মতো?
জানো কি আমার কাছে,
বিশাল এক রাজপ্রাসাদ আছে?
রংচটা তার দেওয়াল
শেওলা ঘিরে থাকে।
এইটুকুনি কুঁড়েঘর,
কিন্তু জায়গা অনেক বেশি
শীতসকাল রোদে ভেজে,
মোমজ্যোৎস্না নিশি।
শরৎ আর কাশ ফুল বন,
হেমন্তে ধানের বোধন;
কোনো এক শ্যামলা মেয়ের
কাজল দীঘির পারে,
বর্ষার মেঘ চুপি চুপি
সারি বেঁধে ভিড় করে।
আলতা গোধূলি আলতো করে
আমার ঘরে আসে,
বসন্ত রং ছড়িয়ে দিয়ে
আমার ঘরে বসে।
গ্রীষ্মের মৃদুমন্দ বাতাস
সেও সান্ত্বনা দিয়ে যায়,
আলগা হেসে বলে
আমরা থাকতে ভয় কি তোমার।
সেগুন, মেহগনি সে আবার কি?
আমি দেওয়াল জুড়ে রূপকথা আঁকি।
উষ্ণতা খুঁজছো তুমি?
এখানে এস একটিবার,
অনেক কথা এখনো রয়ে গেছে বাকি।
অভিমান
এবার আমি পাখি হব,
সূয্যি মামার আঁখি হব;
চাঁদের কপালে টিপটি দিয়ে
নীল চাদরে মুখ লুকাবো।
মায়ের কোলে স্নেহে চুমে,
তুই তখন গভীর ঘুমে;
মেঘের গায়ে হেলান দিয়ে
তোর দিকে তাকিয়ে রব।
হঠাৎ করে কাক ভোরে,
বোধকরি স্বপ্নের ঘরে,
খুঁজছিস আমায় হেথা হোথা,
বুকের মাঝে ওলোট পালোট
কত গোপন গল্প গাঁথা।
আমি তখন দূর দেশে
নিজের মনে মুচকি হেসে,
ভাবছি শুধু আপন মনে;
না থাক ঢের হয়েছে,
এবার ফিরি তোর কাছে।
ফের যদি করিস আড়ি,
থেকে যাবো মেঘের দেশে;
কিম্বা ওই যে মিটিমিটি তারা
বলবো শুধু একটু দাঁড়া।
আর আসব না ফিরে আমি
যতই করিস পাগলামি।
দেখবো তখন কে তোকে
এমন করে আগলে রাখে।
ফিরে দেখা
ফেলে আসা পথ, ছুঁয়ে থাকা স্মৃতি;
কিছু শুধু স্বপ্ন, তবু কি ভীষণ সত্যি।
কখনো রোদেলা দিনে,
কখনো বা বৃষ্টির ঘ্রাণে;
শরৎ সন্ধ্যায়, এলোমেলো মন ধায়
সেই সুরেলা ক্ষণে।
চুরি করা দুপুর, মিলেছিল যে সুর,
আজও বাজে মনে।