Skip to main content
Main Content

এগুলি সব হচ্ছে হাসির বিভিন্ন শব্দে বহিঃপ্রকাশ।  কিন্তু হাসির যদি রকম খুঁজতে বসি, তাহলে কিন্তু রাত কেটে যাবে।  যদিও অনেকগুলি আমাদের জানা, তবু লিখতে বা বলতে বসলে খুঁজে খুঁজে নারি।  

গোঁফের মতো হাসির আমি, হাসির তুমি, হাসি দিয়ে যায় চেনা।  

প্রত্যেক হাসির বিভিন্ন মানে।  অর্থহীন হাসিও আছে, যাকে বলে বোকা বোকা হাসি।  যারা শয়তান, ঠোঁটের ফাঁক-ফোঁকরে একধরনের ত্রুর হাসি ঝুলিয়ে রাখে, দেখেই মনে হয় প্যাঁচ কষছে।  বুদ্ধিজীবীদের আবার চাপা হাসি,মাপা কান্না।  সবার থেকে আলাদা থাকতে হবে তো।

চোরের মতো হাসিও আছে, মানে ওই মিচকে শয়তানদের বাঁকা চাঁদের মতো চ্যাংদোলা হাসি।  লাফিং ক্লাবে সবাই সশব্দে হাসেন।  ওতে নাকি অনেক রোগ নিরাময় হয়।  মানে হাস্যচিকিৎসা।  তা বিনে পয়সায় ময়দানের হাওয়া খেয়ে, প্রানভরে হেসে যদি দুর্গতি দূর হয় আর দূরে থাকে , ক্ষতি  কি?

এরপর আছে পাগলের হাসি।  মানে যখন তখন হাসি।  এটা হচ্ছে বোকা বোকা হাসির উচ্চাঙ্গ মার্গ।  প্রেমে পড়লে এক অদ্ভুত হাসি বেরোয়, অকারণ, অগোছালো হাসি।  ওই এলোমেলো, ফুরফুরে মনের মতো।  নেতা-নেত্রীদের হাসি আবার বিবিধ - দেঁতো হাসি থেকে শুরু করে দাঁড়ি পাল্লায় মাপা হাসি সব থাকে তাদের বুক পকেটে।  " মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক, আমি তোমাদেরই লোক", সঙ্গে দু আউন্স চোখের জলের সাথে তিন মিলিমিটার হাসি ফ্রি।  

দেঁতো হাসি হচ্ছে যেখানে দাঁতগুলি সব বের হয়ে থাকে।  এটি ভূতেদের আইডেন্টিটি কার্ডের মতো।  মিশমিশে কালোর মাঝে সাদা আলোর ঝলকানি, ওই দেখে হিরো থেকে হারকিউলিস সবাই দে ছুট।  

রাক্ষসের হাসি আবার আকাশ-বাতাস কাঁপানো।  তাতে পৃথিবীর হৃদস্পন্দন থেমে যাওয়ার উপক্রম হয়।  ছেঁদো হাসি হলো নকল হাসি, ওর মধ্যে শঠতা থাকে।  চওড়া হাসি তাদের পক্ষে হাসা সম্ভব যাদের হা মুখ বড়।  যাদের একবারে প্রমান সাইজের ফুচকা মুখে নিতে অসুবিধা হয়, তাদের হাসি এক থেকে দেড় ইঞ্চির মধ্যে সীমাবদ্ধ।  

আর একটি আছে ফাজিল হাসি।  এটি হচ্ছে মিচকে হাসি আর রকি হাসির একটি ককটেল।  ও আচ্ছা রকি হাসি হলো পাড়ার ঠেকে বসে ছোকরারা যেমন খিক খিক করে হাসে।  এই রকিদের আর একটি হাসি হচ্ছে খাঁক খাঁক করে হাসি আর তার সঙ্গে ফ্রি তে কিছু অদ্ভুত আওয়াজ এবং/অথবা অশ্রাব্য উক্তি।  কটূক্তি বললেও অত্যুক্তি হয় না।  

প্রাণখোলা হাসি হচ্ছে যার মধ্যে মলিনতা নেই।  একরাশ খুশি উপুড় করা হাসি।  ঝেড়ে কাশার মতো, একরকম ঝেড়ে হাসাও আছে।  মানে  হাসি যেন আসতে চায় না বা তাকে জোর করে চেপে রাখা হয়।  

এরপর আছে কাতুকুতু হাসি।  এটি সবথেকে ভালো বোঝা যায় পুরোনো দিনের বাংলা সিনেমায় জহর গাঙ্গুলিকে দেখলে।  

স্মিত হাসি যা কিনা দেব-দেবীদের ঠোঁটের কোণে হালকা লেগে থাকে, দেখলেই ভালো লাগে, সমীহ জাগে, মন উপুড় করতে ইচ্ছে করে।  

এখন কথা হলো, শুধু মানুষ এবং অপদেবতারাই কি হাসে?  না।  কবি তো বলেই দিয়েছেন, সুনীল আকাশ, শ্যামল কানন,
"বিশদ জোছনা, কুসুম কোমল— সকলই আমার মতো । তারা কেবলই হাসে" ।  সুতরাং মহাজাগতিক সবকিছুই হাসে।  পাহাড় হাসে , জঙ্গল হাসে।  

আচ্ছা, মহাপুরুষদের কিন্তু হাসতে খুব একটা দেখা যায় না। শুধু স্বামী বিবেকানন্দের কিছু ছবিতে স্মিতহাস্য মুখ দেখেছি ।  সারা মুখে এক অদ্ভুত প্রশান্তি ছড়িয়ে আছে।  রবি ঠাকুর? উঁহু, মনে করতে পারি না।  অথচ মানুষটি ছিলেন বেশ রসিক।  আসলে বিদূষক তো মানুষকে হাসান, নিজে অনেক দুঃখ ভিতরে আগলে রাখেন।  

কিছু মানুষের হাসি হচ্ছে তাদের ট্রাম্পকার্ড।  ওই যে মহানায়ক।  সাধারণ চেহারা, অথচ ওই যে ভুবনভোলানো হাসি।  তাতে এখনো মজে আছে
রাই কিশোরী থেকে রসিক খুল্লতাত। ওই রমণীমোহন হাসির কূপে পড়ে কত রমণী যে কাত হয়েছেন তার হিসেব নেই।  

হাসির মতো এতো সংক্রামক কোনো কিছু নেই।  একটা জায়গায় বেশ কিছু লোক একসাথে বসে হাসছে।  এখন যদি আর একজন সেখানে আসে, কিছু জানা, বোঝার আগেই সে হাসতে  শুরু করে দেবে।  

হাসি শরীরের পক্ষে খুব উপকারী।  দিল খুশ, তো সব খুশ।  নিজে, বাড়ির লোক, বন্ধুরা, প্রতিবেশী সবার কাছেই তোমার হাসি দারুন  টনিক।  কিছু মানুষ তো 'হাসমুখ' নামেই পরিচিত হয়ে যান।

তবে সবার কিন্তু হাসির দরকার নেই। এই যেমন "রামগরুড়ের ছানা, হাসতে  তাদের মানা।"

এখন কথা উঠতেই পারে হাসি নিয়ে এতো হাসাহাসির দরকার কি? কারণ হলো আজ বিশ্ব হাসি দিবস। অক্টোবরের প্রথম শুক্রবারে এই দিনটি পালিত হয়।  

সুতরাং আমরা প্রাণ খুলে হাসি, হাসতে হাসতে পেটে খিল লাগুক, মনের আগল ভাঙুক।  আশিতে এসে কাজ নেই, তবে হাসিতে হাসবো না এমন যেন না হয়।  

শুভরাত্রি

Rupa Taxo